তিনটি কবিতা: কৌশিক সেন
অবিনশ্বর
সমস্ত শোক শেষ হলে চিতা কাঠ সরিয়ে উঠে বসবে প্রাচীনতম মৃতদেহটি। এখন দহন লাগেনা আর। নির্বিকল্প চেয়ে থাকে শ্মশানকালীর বরদা দক্ষিণহস্তের অমোঘ লীলায়...
মরক কেটে গেছে বহুদিন। সন্তাপ এখন সম্পৃক্ত। ডোমের ঘরণীর গোল টিপে সূর্যোদয় হবে কাল। তৃপ্তিতে ভরে উঠবে পূবের আকাশ
ধুপকাঠি নিভে যাক! বাঁশের খাটিয়া থেকে উঠে আসুক বিশুদ্ধ নশ্বরতা...
নার্স
বহুদিন হেঁটে আসেনি যে অকালবার্ধক্য, তার জন্য অপেক্ষা করতে করতে শোক গড়িয়ে যায় ব্যালকনি থেকে। আগামী এক শতাব্দী বৃষ্টি না হলে গভীর শোকে স্নান করে উঠবো সকলে। মাটি থেকে মাথা তুলবে নগ্নিকা চারাগাছ। বায়ুমণ্ডলে জমা হবে নিভৃত উষ্ণতা!
একদিন সাদা মেঘ এসে ঠাঁই নেবে দুপুরের ব্যালকনিতে। ক্লান্ত বাসনওয়ালি আঁচল বিছাবে বকুলছায়ায়। সবুজ পাতায় মাদুর পাতবে শালিখ পাখীরা। রোদ এসে পসরা সাজাবে ফিমেল ওয়ার্ডের দশ নম্বর কেবিনের নিভৃতে। সন্ধের অবকাশে সেবিকারা ড্রিপ গুনে রাখবে অনন্ত গোধূলিবেলায়...
কুরুক্ষেত্র
বর্ম খুলে রাখলেই যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়না। রাতের বৃষ্টিতে ধুয়ে যায়না হার, জিত, রক্ত, বেদনা, জিঘাংসার ভার!
শিরস্ত্রান খুলে রাখলেই শেষ হয়ে যায়না সবকিছু। ক্ষত বিক্ষত দেহটাকে যখন তাবুতে টেনে আনতে পেরেছ, তখন এখনই শেষ হয়ে যায়নি আত্মসংকটের করুণ কাহিনী...
রাতের চিতা জ্বালা শ্মশানের ওপাড়ে সারি সারি তাবুতে যারা কথা বলে, ককিয়ে ওঠে যন্ত্রণায়, তোমারই মতো, প্রলেপ লাগায় গভীর ক্ষতে, তারাও তোমার মতো আগামীকালের জন্য অপেক্ষারত!
এখনও তূণীরে কিছু তীর রয়ে গেছে, পিধানে রক্তমাখা তরবারি।ওরাও তো কিছু বলতে চায়! কথা শোনো ওদেরও!!
1 comment:
অসাধারন লাগলো তিনটি কবিতাই । অনবদ্য ও অনন্য উপস্থাপনা । একরাশ মুগ্ধতা রেখে গেলাম ।
Post a Comment