ফারহানার গদ্য: কচুপাতার পানি জীবন

চিত্র: ক্লদিও স্কারজ


কচুপাতার পানি জীবন: ফারহানা
একদা এই সুখবিলাসি "জাগিবার অবিরাম অবিরাম ভার" বইতে না পেরে ভাবল— ধুর ছাতামাথা আর বাঁচব না, আল্লাহ্‌ আমি মরতে চাই, আমারে মরণ দাও। একদিন যায়, দু’দিন যায় পরম করূণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহ্‌র এতে না দয়া হয়, না মায়া। আরে জ্বালা, আমার জীবন আমি মরব তবু তিনি নির্বিকার, তার চেয়ে ঠুঁটোর আধ্যানা করলেও হত, মনটাকে এই বলে স্বান্ত্বনা দিতে পারতাম যে নাহ্‌, বেচারার হাত-পা নেই বলে দিতে পারছে না। যাই হোক, আমি চরম ডিপ্রেশনে। পাঁচ মিনিট পার হতে যেন পাঁচ ঘন্টা লাগছে। সুয্যি স্লো-মোশনে গড়ায়। আমার দিন কাটেনা। ভাবছি এহেন বিতিকিচ্ছিরি প্রছেসটার নাম জীবন! ছ্যা! এইখানে টিকে থাকার জন্য মানুষের এত স্ট্রাগল।
আমার রাত তো ফুরায়। দিন কাটে না। উল্টো ধাতের লোক কিনা। সকাল হলেই ভাবি এত বড় একটা দিন নিয়ে এখন আমি কী করি! যাই কোথা? কাজ কাম কিছু তো নাই।
একদিন দেখি সকলে মহানন্দে জমিতে কাজ করছে। কি সুন্দর তাদের রঙ্গ, রসিকতা, প্রাণবন্ততা। আর আমিই শালা আধমরা হয়ে প্রেতলোকে ঝুলে আছি, না ঘরকা না ঘাটকা হাল থুড়ি বেহাল আমার। না প্রাণের সজীবতা আছে আমার মধ্যে, না মরণের মুক্তি।
বুঝলাম মৃত্যু সহজলভ্য নয়। আমার পক্ষে তো এক্কেবারেই দুর্লভ, সেল্ফরেসপেক্ট, ইগো সব ভুলে ভিখারির মত রহমানের কাছে মরণ চাই কিন্তু তিনি রহম কিছুতেই করেন না। ডিসিশন নিলাম বাঁচব। উপন্যাস পড়তে গিয়ে যখন একটা লাইনও বাদ দিই না, তাহলে নিজের কাহিনিটা পুরো না জেনে হাল ছাড়ব কেন?
ক্ষেতে গেলাম। বাঁচার জন্য। কিন্তু হায়রে কপাল! স্কুল থেকে ফিরে মায়ের বাঁজখাই গলায় গৃহশান্তি ঠুং ঠাং ঠকাস। দোলা (দহলা) যাওয়া যাবে না। কালো হয়ে যাবো। কেউ বিয়ে করবে না। (মেয়েদের এই 'কেউ বিয়ে করবেনা’ কথাটা যে কতবার কতভাবে শুনতে হয়) মনে মনে বললাম কালা- ফর্সা দেখে যারা বিয়ে করে সেই অমানুষদের আমি-বা বিয়ে করতে যাই কোন দুখে! আমি কী কোনো ব্রান্ডেড কোম্পানির প্রোডাক্ট না কোনো ভোগের সামগ্রী! যাই হোক, হার্টের অসুখে ভোগা বাপের কথা ভেবে গৃহশান্তি রক্ষার্থে আমি চুপচাপ বসে হিসাব করতে লাগলাম বাঁচতে হলে আদতে সময় কতটুকু পাবো। মানে গড় আয়ু ষাট ধরে দিনে পাঁচসাত ঘন্টা ঘুম বাদ দিলে আলটিমেটলি বাঁচতে হবে কতক্ষণ!
হিসাব-নিকাশ কষতে কষতে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। ভাবলাম যাক বাঁচা গেল। নানা সেই বাঁচা নয়, এ বাঁচা অন্যবাঁচা। আসল বাঁচায় ফিরে আসতে সময় লেগেছিল অ...নেক।

No comments:

ফেসবুক কমেন্ট

অধিক পঠিত লেখাগুলি