‘বিরক্তিকর’ পত্রিকার আত্মপ্রকাশ সংখ্যা: আলোচনায় ফারহানা

‘বিরক্তিকর’: আত্মপ্রকাশ সংখ্যা—ফারহানা
কোচবিহার লিটিল ম্যাগাজিন মেলায় কেউ একজন বললেন “ওকে একটা বিরক্তিকর দাও তো”, শুনে ভয় পেলাম, ভাবলাম জীবনটাই তো বিরক্তিকর তাতে আবার কোন আপদ এসে জোটে! পরে দেখি কবি পাপড়ি গুহ নিয়োগী একটা ‘বিরক্তিকর’ হাতে ধরিয়ে দিল। আত্মপ্রকাশ সংখ্যা, ২০১৯।
পত্রিকাটির শুরুতেই রয়েছে অরুণেশ ঘোষের একটি অপ্রকাশিত কবিতা, ‘সূর্যাস্তকে বলি’। কবিতাটির একটু অংশ— “…তুইও তো কয়েদি হাত মুঠো করে মন্ত্রী অত্যাভিভাদন/এতটা মূর্খতা চেয়েছে তাই তোকে দেওয়া হল আজ/গুলিতে ঝাঁঝড়া ক’রে—সূর্যাস্তকে বলি/মানুষের প্রযোজন উপহাস করে তোকে? প্রাপ্য পরিণাম”।
এর পরেই রয়েছে দেবজ্যোতি রায়ের সেই দারুণ প্রবন্ধটি, ‘কবির স্বপ্ন-জাগরণের দড়ি ধরে কুয়োয় নামা’। এখানে প্রাবন্ধিক কবি এবং পণ্ডিত্যের পার্থক্যটি তুলে ধরেছেন যথেষ্ট মুন্সিয়ানার সঙ্গে। বলেছেন—“পণ্ডিত আর কবির মধ্যে তফাৎটা হলো সংজ্ঞা আর স্বজ্ঞার। পণ্ডিতেরা সংজ্ঞায় বিশ্বাসী কবিরা স্বজ্ঞায়”। পণ্ডিতেরা বস্তুকে, ঘটনাকে, জগৎকে, জীবনকে সংজ্ঞার শৃঙ্খলায় দেখতে চায়, বাঁধতে চায়। তাই তারা সফলতা, ব্যর্থতারও সার্টিফিকেট দিয়ে দিতে পারেন অনায়াসেই। কিন্তু কবিরা স্বজ্ঞা তথা নিজেকে জানার মাধ্যমে জগৎকে, জীবনকে উপলব্ধি করে করে চলেন। তাই তারা সচেতনতার দড়ি ধরে কুয়োয় তথা অবচেতনে নেমে যান, সেখান থেকে দেখেন, প্রত্যক্ষ করেন, প্রকাশ করেন— কবিতায়।
এরপর রয়েছে সুবীর সরকারের একটি মুক্তগদ্য। ‘হাট, গঞ্জ ও বিরক্তির কোরাস’।
এরপর আসা যাক কবিতার কথায়। শুরুতেই আছে সেলিম মণ্ডলের ‘আলোর অসুখ’ কবিতাটি। কবিতাটির শেষ অংশটি “নাহ্‌ আমি প্রেমিক ছিলাম না/আমার ছিল আলোর অসুখ”। সুভানের ‘রং’ কবিতাটিও উল্লেখের দাবী রাখে “মানুষের রং ধুয়ে গেলে/দূরবর্তী গাছও/মানুষ চিনতে শিখে যায়”। কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ঘোড়া’ কবিতাটিও একবার পাঠে আশ মেটে না। কবিতাটির একটুখানি, “একটা মেয়ে দেখেছিলাম। অজস্র নখ যার।/কপালে জিসম জাদু। তাকে দেখি/আদপে ভাঁজ আছে যার সেই তো ভ্রূণ হয়— ভূমধ্য/তুলতুলে ডিম”। রত্নদীপা দে ঘোষের ‘ড্রিমগার্ল একজন স্বপ্নদোষ’ একটি অনবদ্য লেখা। এছাড়াও রয়েছে সম্পর্ক মণ্ডলের ‘শৃগাল ও বন’, সুদীপ রাহার ‘একটি কবিতা’, শৌভিক বণিকের ‘ম্যাজিশিয়ান’, অরুণাভ রাহা রায়ের ‘শূন্য’, রাতুল ঘোষের ‘একটি কবিতা’, তিতাস বন্দোপাধ্যায়ের ‘সকাল বেলার কবিতা’, মাধুরী হালদারের ‘আলোর গন্ধ’, পাপড়ি গুহ নিয়োগীর ‘হ্রেষা’, দীপায়ন পাঠকের ‘ডাক’। সবার শেষে নীলাদ্রি দেবের ‘অসুখ’ কবিতাটিতে প্রকাশিত হয়েছে অসুখের প্রতি এক তীব্র টান। মানসিক হাসপাতালের বাইরের অস্বস্তিকর পরিবেশ, সুস্থ মানুষের ভ্রূকুটি থেকে রেহাই পেতে কবি ফিরে যেতে চেয়েছেন সেই মানসিক হাসপাতালেই, “আমি অসুস্থ থাকতে চাই/ফিরে আসতে চাই বন্ধুদের কাছে/শাদা বেড, নীল বর্ডার, বেড নম্বর”।
পত্রিকাটির নামাঙ্কণ করেছেন অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়। অদ্ভুত ধরনের সুন্দর প্রচ্ছদটি করেছেন শ্রীহরি দত্ত।

 

পত্রিকা- বিরক্তিকর, আত্মপ্রকাশ সংখ্যা, জানুয়ারি ২০১৯
ধরন- ছাপা/প্রিন্টেড
সম্পাদক- পাপড়ি গুহ নিয়োগী, দীপায়ন পাঠক, শ্রীহরি দত্ত, নীলাদ্রি দেব
প্রকাশস্থান- কোচবিহার
যোগাযোগ- 9614655590
মূল্য- ৩০ টাকা
আলোচক: ফারহানা
কৃতজ্ঞতা: ফেসবুক গ্রুপ ‘উত্তরবঙ্গের সাহিত্যসংস্কৃতি’ আর্কাইভ

1 comment:

Unknown said...

খুব ভালো একটা আলোচনা। আমরা বিরক্তিকর এর পক্ষ থেকে আলোচককে জানাই আমদের কৃতজ্ঞতা। আমরা উৎসাহিত হলাম। পরবর্তীতে আরও ভালো কাজ করার চেষ্টা করবো।

ফেসবুক কমেন্ট

অধিক পঠিত লেখাগুলি