ছোটো কবিতার কাগজ 'ধ্রুবতারা': আলোচনায় রাহেবুল

ছোটো কবিতার কাগজ 'ধ্রুবতারা'—রাহেবুল
ছোটো কবিতার কাগজ ‘ধ্রুবতারা’। আগের সংখ্যাগুলি ছাপানো নাকি পিডিএফ ছিল জানা নেই তবে এ সংখ্যাটি পিডিএফ ফর্ম্যাটে। ভীষণই ছিমছাম পরিপাটি করা পত্রিকা। বর্ণের ক্রম ধরে সাজানো, এবং প্রতি পৃষ্ঠায় প্রথমে সেই অলংকৃত অক্ষর তারপর কবির নাম—এটা বেশ লাগে। কিছু ভালো কবিতা আর একটা ভালো গদ্য পড়ার সুযোগ হলো। সঙ্গে কিছু দুর্দান্ত ‘আঁকা’।
শুরুতে সম্পাদক দু’এক কথায় লিখেছেন এই দুর্বিষহ করোনাকালীন পরিস্থিতির কথা। ঘটনা হলো তারপর যতই সূচিপত্র পার করে এগোনো যাবে সেই করোনার প্রভাব আরও আষ্টেপৃষ্ঠে ধরবে যদিও তা উৎকট-স্থুল নয় ফল্গুর মতন রয়েছে অনেকের কবিতায়, ছবিতে। পত্রিকাটির প্রচ্ছদ যেমন করেছেন শিল্পী রাকেশ খাঁড়া তেমনই তারই আঁকা একগুচ্ছ ছবি এ সংখ্যাটিকে সমৃদ্ধ করেছে। ছবি পেরিয়ে কবিতায় গেলে ২৬ জন কবির কবিতা পাচ্ছি আমরা। সব কবিতা সমান ভালো লাগেনি, লাগবার কথাও নয় অবশ্য কারোরই। কিন্তু ভালো লেগেছে যা সে দিকটা নিয়ে বললেও অনেক।
প্রথমেই বলব মুরারি সিংহের চার লাইনের তিনটি কবিতার কথা। সম্ভব হলে তিনটি কবিতাই এখানে উল্লেখ করতাম কিন্তু তা করলে পত্রিকাটির প্রতি অবিচার হয় অতএব ‘পাঠশালা’ কবিতাটি রইলো নিম্নে— “কোনো বাঁশিওলা চরিত্রে আমি কখনো অভিনয় করিনি/মৃত ফ্যারাওদের সমাধিতে বসে হিব্রুভাষাও শিখতে যাইনি/কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ থেকে ফিরে একটা ঘোড়া আমাকে বলেছিল/নিজের ছায়াটাকে গিলে/ফেলতে পারলে জীবনে আর খিদে পাবে না”
এমনিতে ম্যাদামারা দর্শন আর তার ন্যাকা ন্যাকা উচ্চারণে বাংলা কবিতা ভারাক্রান্ত সেখানে দাঁড়িয়ে এ লেখা কিছু বাড়তি বলছে নাকি?
মোহাজির হোসেন চৌধুরীর ‘নেংটি’ এবং ‘লাশ’ কবিতায় ‘ন্যাংটি’, ‘শ্যানচোখ’ এমন ব্যতিক্রমী ব্যবহার চোখে পড়ে শব্দের। সঙ্গীতা মজুমদার চন্দের কবিতার নাম ‘করোনাকাল’! সুচেতা বিশ্বাসের কবিতা লকডাউন! যতিরেখ্‌ বিশ্বাসের দু’টি কবিতা আছে, দু’টিতেই করোনার প্রচ্ছন্ন প্রভাব: “কান্নার অতলে : অগুন্তি প্যারাসিটামল্‌/মাথায় বড়ো যন্ত্রণা/ফাঁকা সিটের গণপরিবহন/দিনযাপনে ধুলো, মাকড়সা জাল…”
একটা জিনিস না বললেই নয় এ পরিস্থিতিতেও অনেকের লেখায় পুনঃপুন ফুলঘাসপাতার উপস্থিতি, এখানেও কয়েকজনের লেখায় সেটা ঘুরেফিরে চোখে পড়ল, নতুন চিত্রকল্প/কল্পচিত্রের কি অভাব পড়িয়াছে বাংলায়? আবার অন্য একটি কথাও বলা দরকার যেনতেন প্রকারেণ সময়কে ছোঁবার তাড়ায় সব স্থুল না হয়ে বসে! শীলা বিশ্বাসের কবিতাগুলি দু’লাইনের। একলাইনের কবিতায় প্রায়শই যেরকম ভাষণ কিংবা ভারি দর্শন কপচানো হয় এখানে তা আছে কি? মনহরা মনে হয়েছে লেখা ক’টি। একটি থাকুক এখানে—লেখাটির নাম ‘ইডিপাস’: “কোলে মাথা রাখলে/ভারী হয়ে ওঠে স্তন”
প্রদীপ চক্রবর্তীর ‘হুন’ কবিতাটিতে পাই একটা অপর রোমান্টিকতা। “…তোমার ভুলে যাওয়া ইশারার হাতছানি পেয়ে/একসারি বক রোদ্দুর হতে ব্যস্ত”
বিশ্বজিৎ এর ‘সবুজ’ কবিতাটা নিই: “একদিন সবাই ঘুমোবে।/পিঁপড়েতে ভরে যাবে/সমস্ত ওষুধের দোকান…” মনেহয়, মৃত্যু ওত পেতে চারোপাশ। করোনার আগেও এমন ছিল অনেকের, আজকেও এমন।
নীলাঞ্জন সাহার এক লাইনের ১০ টি কবিতা। বলার ভাগটাই যেন বেশি। “জীবন সামনে তাকালে গরুর গাড়ি, পেছনে তাকালে এরোপ্লেন”এ ধরনের লেখায় একটা তির্যক ব্যঙ্গ আছে কিন্তু তাতে কবিতা? পাঠক আমার সঙ্গে একমত নাও হতে পারেন অবশ্য। তেমনই প্রতীক চন্দ্র চৌধুরীর একটি কবিতা— “আগুনে পোড়ে হাত/ফাগুনে পোড়ে প্রেম/পেটে জোটে না ভাত/দুঃখের এটিই ফ্রেম”। কথাগুলো আর কোনোভাবে বলা যেত কি? তেমনই রীতা ঘোষের কবিতা। আরও দু’একজনেরও। এছাড়া ফুলগাছপাতানদীর প্রসঙ্গ তো আগেই উল্লেখ করেছি…
তাপস রায়, প্রবীর মজুমদার, বিশ্বজিৎ লায়েক, মধুছন্দা মিত্র ঘোষ, মালবিকা হাজরা, রিয়া দাশগুপ্ত, সঞ্জীব সেন প্রমুখের কবিতা ভালো লাগে, কবিতাংশ উল্লেখ করা থেকে বিরত রইলাম। পাঠক নিজে পত্রিকাটা পড়বেন এই ভরসায়।
সবশেষে একটি প্রবন্ধ, সঞ্জীব নিয়োগীর। শিরোনাম ‘কবিতার সংকটকালীন উচ্চারণ’। করোনার আবহ এখনকার কবিতাকে কীভাবে প্রভাবিত করছে সেটাই তুলে ধরেছেন লেখক কয়েকজন কবির কবিতার বিশ্লেষণ করে। প্রবন্ধটি অবশ্যই জরুরি পর্যবেক্ষণ। এমন প্রবন্ধে যদিও একটা সীমাবদ্ধতা থাকেই কবিতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে!
…পত্রিকাটি আগ্রহীজন পড়ুন, আমার মনেহয় নিরাশ হতে হবে না। দামও বেশি নয়, মাত্র ৩০ টাকা। এমনকি এ আর্থিক অনটনের মুহূর্তে কে জানে এই স্বল্প বিনিময়মূল্যটুকুও অনেক লিটিল ম্যাগাজিন সম্পাদকের কাছে মূল্যবান হতে পারে। পত্রিকাটি পেতে ফোন পে নং 9564321311 তে বিনিময়মূল্য প্রদান করে যোগাযোগ করুন তাতেই।

পত্রিকা: ধ্রুবতারা, জুলাই ২০২০ 
ধরন- পিডিএফ 
সম্পাদক: সঞ্জয় ঋষি 
প্রচ্ছদ: রাকেশ খাঁড়া 
প্রকাশস্থান: অনুল্লেখিত 
পৃষ্ঠাসংখ্যা: ৬০ 
মূল্য: ৩০ টাকা মাত্র 
আলোচক: রাহেবুল

No comments:

ফেসবুক কমেন্ট

অধিক পঠিত লেখাগুলি