নীলাদ্রি দেবের কবিতা: মাঝরাতের ইতর সংলাপ

চিত্র: অ্যানি স্পার্ট


মাঝরাতের ইতর সংলাপ: নীলাদ্রি দেব
রাষ্ট্র রাষ্ট্র করে আর কত দীর্ঘ শ্বাস তুলে আনব
আমিও তো মাঝরাতে ঘুমোতে যাই
ঘুম না হলে বারবার উঠি
জল খাই
বাথরুমে যাই
হাঁটি, শুধু হাঁটি
আমারও তো চিন্তা হয়
রক্তচাপ ওঠানামা করে
বয়সের সাথে এগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই
ওজন উচ্চতা বা লিঙ্গের সাথেও
তাই এসব প্রেসক্রিপশনের ওপর
লাইন দিয়ে লিখে নেন ডাক্তার
তিনি কখনও বলে ওঠেন, কেমন আছেন
সবটা বলতে শুরু করলে মাঝপথে থামিয়ে দেন
এখন জেনে গেছি,
রাষ্ট্র বিষয়ক কোন অসুবিধের উপশম
ডাক্তার দিতে পারবে না
তবে কার কাছে যাব?
ভোরে ঘুম ভেঙে গেলে বাথরুম থেকে বারান্দা
সিলিং-এর দিকে তাকাই, কার্ণিশের দিকে
সকালের ঘাসে খালি পায়ে হেঁটে আসি বাঁধ বরাবর
তবু নদীর দিকে ফিরেও তাকাই না
নদী আরও বেশি প্রশ্ন নিয়ে বসে আছে
আগে জমাট কষ্ট সব বমি হয়ে উঠে আসত
নদীতীরে বোল্ডার, তারজালির মাঝে ভরে দিতাম
এখন উল্টো ছবি দেখি
কাছে গেলেই নদী থেকে উঠে আসে প্রশ্ন
স্থির!
আর স্থির থাকতে পারি না
এলোমেলো উঠে আসি
মনে হয়, এত যে উত্তর
স্পর্শ পেলাম না, গেঁথেও দিলাম না
এদের কী হবে?
আদৌ কি কিছু হবে?
কিন্তু শূন্য একটা বাসন
ভুল শস্য দিয়ে পূর্ণ হতে দেওয়া যায় না
কে সব বলেছিল আগে, ভুল বলে কিছু নেই
তবে কি
প্রশ্নগুলো সব, বিপক্ষ যুক্তিগুলো সব অন্ধকার?
পক্ষ বা বিপক্ষ গুলিয়ে দিয়ে যায়
পক্ষ বা পথের সংখ্যা বহু থেকে বহু
তবু গলার কাছে কাঁটা বিঁধে আছে
না জানা অঙ্ক নিয়ে খুব একটা আগ্রহ নেই
অসম্পূর্ণ অঙ্কটি সম্পূর্ণ করে দিন, প্লিজ
আমি পারছি না
আর পারছি না
এবারে কার কাছে যাব?
যারা জানেন,
তারা উত্তর থেকে পিছিয়ে আসতে আসতে
শুরুর বিন্দু আঁকেন, শুরুর গন্ধ শুঁকে শুঁকে
এতদূর উল্টো পথে আসা
ব্যাক ক্যাল্কুলেশন একটা গেমপ্ল্যান
সব, সমস্ত ঘাটে নৌকোর গুড়ি এসে ধাক্কা কি খায়?
একটা সমীকরণের চারপাশে মেঘ করে আসে
আমি কুয়াশা জড়ানো এক গাধা
ভার বয়ে যাই
কুয়াশায় হারিয়ে যাই অনির্দিষ্টকাল
যখন অনুভব করি ব্যর্থতা,
চিৎ হয়ে থাকি ভরা দুপুরে
ঘুম নিয়ে এখন আর মাথাব্যথা নেই
দেহ নিয়েও
কিন্তু জন্ম?
জন্ম হয়েছে কেন এই অবাধ্য নগরে?
কেন এত জোব্বার আঁকড়ে রাখা, চামড়া বদল...
জানি না
এগুলো জানতেই তো জন্ম, মৃত্যুর মাঝে
সামান্য বিরতি
আমাকে জানতেই হবে
নিরুপায় হয়ে আজকাল হিজিবিজি লিখি
উত্তর, শুকনো কুয়োর ভেতর অনেকটা জলের মতো
উঠে না এলে
ফাঁকা থাক
ফাঁকা থাক
আর ভিড় বাড়াচ্ছি না অক্ষরের
সময়ের কাছে উত্তর থাকলে আগামী লিখে দেবে
কেউ তো জানবে
তাহলে এইসব প্রশ্ন আজ অমূলক?
মানতে পারছি না
টার্গেট করছি নিজেকে, বারবার
এবারে শেষ বুলেট
আমি রাষ্ট্রের মুখোমুখি বসতে চাই
মুক্তি আর স্বাধীনতার সংজ্ঞা লিখতে চাই
গোপন চিরকুটে
শেষবারের মতো বলতে চাই,
গলা উঁচিয়ে বলতে চাই,
জন্ম মৃত্যুর দায় থেকে আপনি হাত গোটাতে পারেন না
কেননা রাষ্ট্র, আপনিই প্রভাবিত করেন
আমার প্রতিটি শ্বাসকে

3 comments:

কৌশিক সেন said...

শুধুই কবিতা নয়, এক সংবেদনশীল হৃদয়ের গভীর আত্মকথন..

কৌশিক সেন said...

শুধুই কবিতা নয়, এক সংবেদনশীল হৃদয়ের গভীর আত্মকথন..

রাহেবুল said...

এ সংখ্যার অন্যতম ভালো কবিতা...

ফেসবুক কমেন্ট

অধিক পঠিত লেখাগুলি